বাংলা লোকসগীতের কিংবদন্তি ও ভাওয়াইয়া গানেরবরপুত্র উপমহাদেশের সুর সম্রাট আব্বাসউদ্দিন-এর সুযোগ্য সন্তান শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসীর প্রথম গানের অ্যালবাম ‘উড়িল সোনার পায়রা’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি গত ১০ মে ২০২৫ সংগীতের নাও ভাসিয়ে সোনার পায়রা হয়ে চিরতরে উড়াল দিলেন। তাঁকে আর কখনো সুরের সুধা প্রাণ করতে দেখা যাবে না; কিন্তু তিনি সুরের যে সুবাস ছড়িয়ে গেছেন তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিমোহিত হবে, সুভাসিত হবে, সুরের অবগাহনে নিমজ্জিত থাকবে। তিনি ভরা নদীর বাঁকে পাল তোলা সৈনিক হয়ে জীবন তরী বয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, উপস্থাপক, সংগ্রহক, গবেষক, সাহিত্যিক, সংগঠক সহ নানা গুণের অধিকারী।
ভাওয়াইয়া গানের জন্মভূমি নামে খ্যাত কুচবিহারের বলরামপুর গ্রাম। কালজানি নদীর তীরে অবস্থিত এ বলরামপুর গ্রামে। এ গ্রামেই উপমহাদেশের লোকসংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তী ভাওয়াইয়ার রাজপুত্র শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৩৭ সালের৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছেন। ভারত ভাগ হওয়ার পর প্রথমে পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে তারপরপুরানা পল্টনে ‘হীরামন মঞ্জিল’-এ দীর্ঘ ৫০ বছর বসবাস করেছেন। ২০০১ সাল থেকে তিনি গুলশানে বসবাস করতেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় কুচবিহারের জেনকিন্স স্কুলে। পরবর্তীতে ভর্তি হন মডার্ণ স্কুল কলকাতায়। এরপর ভারত বিভাগের পর ভর্তি হন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে। ১৯৫৪ সালে তিনি সেখান থেকে স্টার মার্কসহ ১৩তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই এ পরীক্ষায় স্টার মার্কসহ ১৪ তম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে অনার্সে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে অনার্স পাশ করার পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে এম এ (ইতিহাস) পাশ করেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর পিতা উপমহাদেশের লোকসংগীত সম্রাট, মরমী কণ্ঠশিল্পী ও সুরস্রষ্টা আব্বাসউদ্দিন আহমদ(২৭ অক্টোবর ১৯০১ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৯)।বাংলাদেশে লোকজ গানের যে জাগরণ সৃষ্টি হয় তার অন্যতম কৃতিত্ব এ সুর সাধকের। মাত্র বিশ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। তাঁর দাদা মৌলভী জাফর আলী ছিলেন নামকরা আইনজীবি। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর মা লুৎফুন্নেসা বর্তমান নীলফামারি জেলার অধিবাসী ছিলেন। তিনি একজন লেখিকা ছিলেন। তাঁর ‘শেষ বিকালের কান্না’, ‘কিছু ফল কিছু স্মৃতি’, ‘সময় কথা বলে’ নামে তিনটি গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর চাচা মরহুম আবদুল করিম ভাওয়াইয়া গানের গীতিকার, কবি, নাট্যকার ও অভিনেতা ছিলেন।তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর ডাক নাম ‘তুলু’। তাঁর মেঝো ভাই মোস্তফা জামাল নীলু মাত্র ছয় বছর বয়সে টাইফয়েডে মারা যান। বড়ভাই প্রয়াত মোস্তফা কামাল দুলু বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।তাঁর বড় ভাইয়ের নাম ‘মোস্তফা কামাল দোদুল’ নামটি রেখেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যদিও পরে তার ‘দোদুল’ ডাক নামটি ছোট করে ‘দুলু’ বলে ডাকা হতো। ছোট বোন দেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। বাংলাদেশের সংগীত জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

মুস্তাফা জামান আব্বাসীর সহধর্মিণী প্রফেসর আসমা আব্বাসী একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সংগঠক। তাঁর বেশ কয়েকটি বই পাঠকনন্দিত। আসমা আব্বাসী ২০২৪ সালের ৪ জুলাই ইন্তেকাল করেন। তাঁদের দুই মেয়ে। সামিরা আব্বাসী ও শারমিনী আব্বাসী। সামিরা আব্বাসী লোকসঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত ও আধুনিক গানের চর্চা ও গবেষণা করছেন। তিনি মাত্র ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিশুশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বর্তমানে সামিরা আব্বাসী আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা শেষে গবেষণা কাজে নিয়োজিত আছেন। শারমিনী আব্বাসী একজন আইনবিদ। তিনি আমেরিকার অ্যাথেন্স এর জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল এম করেছেন। পাশাপাশি গান ও লেখালেখি করেন। প্রফেসর ড. নাশিদ কামাল মুস্তাফা জামান আব্বাসীর ভ্রাতুষ্পুত্রী। তিনি নজরুল গীতি, ক্ল্যাসিক্যাল গজল, পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া ও আধুনিক গান করেন। উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি, চায়নিজ ইত্যাদি ভাষায় গান করতে পারেন। নাশিদ কামাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের গায়িকা হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়া একক অনুষ্ঠান করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, পাকিস্তান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর সঙ্গীতের হাতেখড়ি তিনি হলেন ওস্তাদ কাদের জমিরি। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের ঠুংরীর অবিসংবাদিত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ জামির উদ্দিন খাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র। তাঁর গানের ওস্তাদের মধ্যেÑ ওস্তাদ গণেন চক্রবতী, ওস্তাদ আবদুল গফুর খান, ওস্তাদ মাস্তান গামা, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খান, ওস্তাদ ইউসুফ খান কোরেশী, ওস্তাদ মনির হোসেন খান, ওস্তাদ সালামত আলী খান, ওস্তাদ নাজাকাত আলী খান, ওস্তাদ আসাদ আলী খানাই লাল শীল, মফিজুল ইসলাম, বেদার উদ্দিন আহমেদ, আবদুল হালিম চৌধুরী, মোমতাজ আলী খানের ওস্তাদ মুন্সি রইছ উদ্দিন খানের নিকট দীর্ঘ বার বছর উচ্চাঙ্গ ও অন্যান্য সঙ্গীতের শিক্ষা নেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর গান প্রথম রেকর্ড করে তৎকালীন বিখ্যাত কোম্পানী হিজ মাস্টার্স ভয়েস (করাচি) ১৯৫৭ সালে। আর গানের কলি ছিল : ‘আমায় ভালোবেসে দিলি এতো জ্বালা’, অপর গানটি ছি: ‘ও মন মাঝিরে কোন ঘাটে তুই ভিড়াবে তোর নাও’। গান দুটির গীতিকার ও সুরকার ছিলেন বিখ্যাত লোকসঙ্গীত সুরকার কানাই লাল শীল। গান দুটি রেকর্ড হওয়ার পর মুস্তাফা জামান আব্বাসীর নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৬৪ সালে কুষ্টিয়া হতে বাউল বিহাল শাহ, ফকির বাউল খোদা বকস বিশ্বাস, ঝড়ু শাহ ও জোনাব আলী মল্লিক সহ ১০ জন বাউলকে ঢাকায় তাঁর বাসায় নিয়ে আসলেন। এই ১০ জন বাউলের নিকট হতে লালন ফকিরের মূল সুরে প্রায় ৩০০ গান টেপে রেকর্ড করলেন। আর টেপে গান রেকর্ড করার সময় প্রতিদিন উপস্থিত থেকে উপদেশ দিতেন অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর স্বপ্ন বাংলাদেশে একটি ফোকলোর ইনস্টিটিউট হোক। ১৯৬৪ সনের আগে লালন ফকিরের গান মারফতি ও মুর্শিদী সুরে গাওয়া হত। ১৯৬৪ সালে লালনের মূল সুর সংগ্রহ করার পর আজ অবধি মূল সুরে টেলিভিশন ও রেডিওতে গান গাওয়া হচ্ছে, আর এ কৃতিত্বের একমাত্র দাবিদার মুস্তাফা জামান আব্বাসী।
বাংলা লোকসাহিত্যের পুরোধা পুরুষ মুস্তাফা জামান আব্বাসী সঙ্গীত ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই ভাটিয়ালি, জারি, সারি, দেহতত্ত্ব, ভাওয়াইয়া, মারফতি, মুর্শিদি ইত্যাদি বাংলা প্রাচীন লোকগীতি তিনি নিজে পরিবেশন করার পাশাপাশি তাঁর পরিচালনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘লৌকিক বাংলা’, ‘আমার ঠিকানা’ প্রভৃতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লোকসঙ্গীতকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে বহুদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনে আজানের দোয়ার বাংলা অনুবাদ প্রচারিত হয়েছে। দীর্ঘ ৫০ বছর তিনি বাংলাদেশ বেতারে গান গেয়েছেন। ছোট বেলায় মুস্তাফা জামান আব্বাসী অনেক অনুষ্ঠান করেছেন বেতারে। তিনি প্রথম বেতারে একটি নাটকে অভিনয় করেন ১৯৪৯ সালে। নাটকের নাম মার্চেন্ট অব ভেনিস, পরিচালক আবদুল মতিন।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী বাংলা ছায়াছবিতে কমপক্ষে ১০/১২ টি গান গেয়েছেন। ৭/৮টি ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। তিনি প্রথম যে ছবিতে গান করেছেন তাঁর নাম ছিলো ‘আসিয়া’;গানটি ছিলো ‘দ্যাওয়ায় করছে মেঘ মেঘালি’।সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতারাং’ ছবিতে তিনি ও ফেরদৌসী রহমান একসাথে গান করেছেন। গানটি ছিলো ‘চাঁদ বাঁকা জানি’। গানটি সুর করেছিলেন সত্য সাহা। গানটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো। আব্বাসী ‘রাজধানীর বুকে’ ছবিতে গান করার পর ছবির পরিচালক এহতেশাম তার পরবর্তী ছবির নায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু গানের প্রতি গভীর মনোযোগ থাকায় অভিনয় জগতে আসেন নি। তবে তিনি সঙ্গীত পরিচালনার জন্য বেশ কয়টি প্রস্তাবও পেয়েছিলেন। তিনি চার বছর সেন্সর বোর্ডের মেম্বার ছিলেন। সেন্সর বোর্ডের মেম্বার থাকাকালে প্রায় তিনশত ছবি দেখেছেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি বাংলা লোকসঙ্গীতকে পরিচিত ও প্রশংসিত করেছেন। পৃথিবীর ২৫টি দেশে আমাদের ভাটিয়ালি-বিচ্ছেদি-ভাওয়াইয়া-চটকা-নজরুলগীতি পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ১১ বছর। সঙ্গীতজ্ঞদের বিশ্ব অধিবেশনে একাধিকবার তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৫০ বছর তিনি ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক ও সংগ্রাহক হিসেবে সংগ্রহ করেছেন কয়েক হাজার গান।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৬১ সালে করাচিতে জাফর ইব্রাহিম নামে একটি কোম্পানীতে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। তিনি ছয়মাস এই কোম্পানীতে চাকরি করেছেন। পরবর্তীতে ঢাকা হাইসন্স কোম্পানীতে এসিস্টেন্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি নেন। পরে তিনি কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তিনি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন। এরপর তিনি নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ট্রেড পয়েন্ট লিমিটেড বহু বছর পরিচালনা করেন। মুস্তাফা জামান আব্বাসী ২০১২ সাল ২০২৮ সাল Independent University তে অধ্যাপনা করছেন। সেখানে তিনি `Kazi Najrul Islam and Abbasuddin Ahmed Research & Study Centre’ নামে একটি ইন্সটিটিউট করেছেন। সেখানে নজরুল-আব্বাসউদ্দিন পড়াতেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী নভেম্বর ২০০১ থেকে আগস্ট ২০০২ সাল পর্যস্তবাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন।তিনি ১৯৭৭ সালে রোটারি ক্লাব অব ঢাকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি রোটারি জেলা গভর্র্নর ছিলেন। এরপর ৩ বছর তিনি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ এর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাহিত্য ও সাস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থেকে নিরলসভাবে কাজ কওে গেছেন। জীবনের শেষ বয়সেও তিনি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। পৃথিবীর নানান শহরে গান গেয়েছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী গত দুই দশক ধরে সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিবৃষ্ট রেখেছেন। প্রবন্ধ-নিবন্ধ, অনুবাদ, উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, রম্য রচনা, আত্মজীবনীসহ৬০ টির মতো বই লিখেছেন। বিশেষ করে, নবী [সা]-কে দেখেছেন নতুন চোখে। প্রথম ফসল ৫০০ পৃষ্টার রাসূল (সা.)-এর জীবনী‘মুহম্মদের নাম’। ‘স্পষ্ট জ্যোতি আল কুরআন’ শিরোনামে কুরআনের সমসাময়িক অনুবাদ করেছেন নতুনদের জন্যে। জাতীয় প্রেস ক্লাব তাঁকে ২০১০ সালে অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখকের মর্যাদা দিয়েছেন। তাঁর বই সম্পর্কে দুই নোবেল বিজয়ীর দুটি অভিমত তুলে ধরা হলো:
“…. I did not realise that Mustafa Zaman Abbasi, a respected personality by his own right, has written such an excellent and revealing study of our National Poet”-Professor Muhammad Yunus.
“Read your autobiography Jiban Nadir Ujane. It is a continuation of the fiery songs that we heard in your father’s voice. The book is excellent [received on telephone”- Professor Amartya Sen.
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর সম্পাদনায় ‘নজরুল-আব্বাস উদ্দিন স্মৃতিময় অ্যালবাম’ প্রকাশিত হয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের দুর্লভ ছবি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এই অ্যালবাম। এতে নজরুল সংশ্লিষ্ট ৮০টি ও আব্বাস উদ্দিন সংশ্লিষ্ট ৪৫টি ছবি মিলে মোট ১২৫টি দুর্লভ ছবির অ্যালবামে সন্নিবেশ ঘটেছে।তাঁর প্রকাশিত বইসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : জাপান: সূর্য উঠেছে যেখানে, গাফিল (সুফি কবিতা), রুমির অলৌকিক বাগান, জীবন নদীর উজানে (আত্মজীবনী), প্রাণের গীত, ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি, গোধুলীর ছায়াপথে, Of Musics and Mundanes, অচেনা চীন চেনা আমেরিকা, কালজানির ঢেউ, পুড়িব একাকী, প্রেমের গান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গালিবের হৃদয় থেকে, ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি (১ম খন্ড), ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি (২য় খন্ড), যে নামেই ডাকি, লঘু সংগীতের গোঁড়ার কথা, যা হবার তা হবে, Kazi Nazrul Islam: Man and Poet,সুরের কুমার: শচীনদেব বর্মন, বাকি জীবনের কথা, আব্বাসউদ্দিনের গান, আব্বাসউদ্দিন মানুষ ও শিল্পী, ইমামের শুভ দৃষ্টি, স্বপ্নেরা থাকে স্বপ্নের ওধারে, রাসূল (সা.)-এর পদপ্রান্তে, আমার মায়ের মুখ, স্বাধীনতা দিনের গান, হরিণাক্ষি, মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী, দোয়া কবুল হবেই, জলসা থেকে জলসায়, 50 Years of Ekushe February, Celebrating The Mother Tongue, দুয়ারে আইসাছে পালকি, ধনধান্য পুষ্প ভরা, সন্ধ্যা হয়নি এখনো, ক’ ফোঁটা চোখের জল, ঢাকা না কলকাতা ইত্যাদি।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী’র প্রাপ্তি কম নয়। দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে পুরস্কার ও সম্মাননার সংখ্যা শতাধিক। তিনি সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি এপেক্স ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড, ১৪০০ শতক বার্ষিকীর সেরা লেখক ও গায়কের পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন স্বর্ণ পদক,মানিক মিয়া পুরস্কার, নজরুল একাডেমী এওয়ার্ড, সিলেট সংগীত পুরস্কার, লালন পরিষদ পুরস্কার, আজীবন সম্মাননা পুরস্কার চ্যানেল আই,আজীবন সম্মাননা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও চ্যানেল আই,সুফি পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কারসহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী বাংলার শাশ্বত জমিনে একবৈচিত্রময় মানুষ। কখনো আধ্যাত্মিক পুরুষ, কখনো মরমি সাধক, কখনো স্বার্থক শিক্ষক, এসবই যেন অবাক করা মহাপূর্ণতা। তাঁর সংস্কৃতি চেতনা বাংলার মৌলিক সংস্কৃতি ধারণার এক বিরাট অংশ। তিনি জীবনবাদী একজন মহাপ্রাণ, জীবনের নিগূঢ় সত্যকে মানতে যিনি অস্বীকার করেননি,এখানেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য। সব ধরনের অসুন্দরের বিরুদ্ধে তাঁর চেতনাবোধ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলকে অধিগ্রহণ করে।সংগীত ও সাহিত্যের মধ্য দিয়ে তিনি ধারণ করেছেন দেশকে, সমাজকে, সময়কে। আত্মপোলব্ধির জয়গানে মুখর ছিলেন তিনি। আত্মার পবিত্রতাই ছিলো তাঁর কাম্য। সমাজের বুকে এঁকে গেছেন উজ্জ্বলতর দিকচিহ্ন। মহাকালের পাতায় সোনালী হরফে লিপিবদ্ধ হয় তাঁদের নাম। এমন অনন্ত পথের যাত্রী হয়ে চির বিদায় নিয়েছেন শিল্পী মুস্তাফাজামান আব্বাসী।